করেনা ভাইরাস (কভিড-১৯) মহামারি পরিস্থিতির কারণে বিশ্ব অর্থনীতি ১৯৩০ সালের মহামন্দার চেয়েও খারাপ হতে পারে সতর্ক করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রধান ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা। তিনি বলেছেন, লকডাউনের কারণে বহু দেশের প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এবং কর্মী ছাঁটাই হচ্ছে। উদীয়মান দেশের অর্থনীতি এবং উন্নয়নশীল দেশগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মহামন্দার পর সবচেয়ে খারপ সময় পার করছে বিশ্ব অর্থনীতি।
আগামী সপ্তাহে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ এর বসন্তকালীন সভা ভার্চুয়ালি অনলাইনে অনুষ্ঠিত হবে। ওই সভা উপলক্ষ্যে দেওয়া এক বার্তায় এমন মন্তব্য করেন তিনি। আইএমএফ প্রধান উল্লেখ করেন, মাত্র তিন মাস আগে ২০২০ সালে আমাদের সদস্য ১৬০টি দেশের মাথাপিছু আয়ে প্রবৃদ্ধি হবে বলে আশা করেছিলাম। কিন্তু বর্তমানে এই পরিসংখ্যান একদম পালটে গেছে। আমরা আশঙ্কা করছি ১৭০টি দেশে মাথাপিছু আয়ে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হবে। অর্থাত্ এসব দেশের মাথাপিছু আয় কমে যাবে। তিনি বলেন, প্রকৃতপক্ষে মহামন্দার পর সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক সংকটের আশঙ্কা করছি আমরা। জর্জিয়েভা বলেন, যদি এই বছরের মাঝামাঝি সময়ে মহামারির প্রকোপ কমে তাহলে আগামী বছর আংশিক পুনরুদ্ধার হতে পারে বলে আশা করা যায়। তবে তিনি সতর্ক করেছেন পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে।
গত সপ্তাহে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী ৮১ শতাংশ শ্রম শক্তি এই মহামারির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ৩৩০ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বলেন, এটা এখন পরিষ্কার যে, বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃৃদ্ধি এ বছর তীব্রভাবে নেচিবাচক হবে। ভাইরাসটি প্রভাব কমিয়ে আনতে যে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে তাতে অর্থনীতির গতি কমে যাচ্ছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে খুচরা ব্যবসা, সেবা খাত, পরিবহন এবং ট্যুরিজম। বেশিরভাগ দেশে আত্ম-কর্মসংস্থান এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে কর্মসংস্থান সবচেয়ে বেশি।
আরো খবর:
- কালিয়ায় চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিজয় দিবসের শুভেচ্ছার পোষ্টার ছিড়লো দুবৃত্তরা
- কালিয়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের নতুন কমিটি
- কালিয়ায় নদীতে ডুবে শিশুর মৃত্যু
- কালিয়ার চাচুড়ী বাজারে ছাত্রলীগের আনন্দ মিছিল
- ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের পাল্টাপাল্টি সমাবেশ ডাকায় নড়াইলের কালিয়ায় ১৪৪ ধারা জারি
উদীয়মান দেশগুলোর মধ্যে আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা এবং এশিয়ার দেশ সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে। গত দুই মাসে উদীয়ান দেশগুলো হতে ১০ হাজার কোটি ডলার পুঁজি বের হয়ে গেছে যা বিশ্ব মন্দার পর তিন গুণ বেড়েছে। নিত্যপণ্যের দাম অর্ধেক কমে গেছে। দরিদ্র্য দেশগুলোর রেমিট্যান্স আরো কমার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
উদীয়মান দেশগুলোর জন্য লাখ কোটি ডলার প্রয়োজন। জরুরিভাবে তাদের সহায়তা প্রয়োজন। তবে আশার দিক হলো বিশ্বব্যাপী প্রায় ৮ লাখ কোটি ডলার উদ্ধার প্যাকেজ গ্রহণ করা হয়েছে। এর বাইরেও অনেকেই আর্থিক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, আমরা এখনো জানিনা বিশ্ব অর্থনীতির অবস্থা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে। তবে আমরা আশা করি, এই সংকট আমরা সম্মিলিতভাবে কাটিয়ে উঠতে পারব।
উল্লেখ্য, ১৯৩০ এর দশকে বিশ্বব্যাপী মহামন্দায় পুরো বিশ্বর চিত্র পাল্টে গিয়েছিল। ১৯২৯ সাল থেকে ১৯৩২ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী জিডিপি প্রায় ১৫ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পায়। বিশ্ববাণিজ্য প্রায় ৫০ ভাগ কমে যায়। কিছু দেশ পরবর্তীকালে ঘুরে দাঁড়ালেও বেশির ভাগ দেশ আগের অবস্থায় ফিরতে পারেনি। সে সময়ের মহামন্দার প্রভাবে বহু দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হয়। এর প্রভাব দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত ছিল।